বৃহস্পতিবার ২৪ এপ্রিল ২০২৫

সম্পূর্ণ খবর

বিনোদন | গোয়েন্দা দীপক চ্যাটার্জি, হারানো শহরতলি এবং এক না-মেটা খিদের গল্প

Kaushik Roy | ৩০ জানুয়ারী ২০২৫ ১৩ : ৪৫Kaushik Roy


সীমান্ত গুহ ঠাকুরতা

দার্জিলিং বা দেরাদুনের কোনও কনভেন্টে নয়, এমনকি সাউথ পয়েন্ট, সেন্ট জেভিয়ার্স বা নরেন্দ্রপুরেও নয়, তাঁর পড়াশুনা দমদমের কাছে এক উদ্বাস্তু পল্লীর অখ্যাত এক সরকারী স্কুলে। সেখানে লেখাপড়া কতটা হত, তা নিয়ে সংশয় থাকতে পারে, কিন্তু দুষ্টুমি আর এঁচোড়ে পাকামি যে প্রভূত পরিমাণে হত, সে বিষয়ে সন্দেহের কোনও অবকাশ নেই। গত আট,নয় বা শূন্য দশকের এই সমস্ত উদ্বাস্তু কলোনির স্কুলগুলোতে পড়াশুনা করে ভবিষ্যত জীবনে যারা কৃতবিদ্য হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, তাদের প্রায় সকলেরই বাল্য এবং কৈশোর জুড়ে রাজত্ব করেছিল কিছু ‘ম্যাটিনি আইডল’। সেইসব অলৌকিক ক্ষমতাসম্পন্ন নায়কদের সামনে রেখেই তারা বড় হয়েছে, অথবা বলা ভাল, সেই নায়করাই দায়িত্ব নিয়ে তাদের বড় করে তুলেছে, তাদের চরিত্র গঠন করে দিয়েছে। এমনই কয়েকজন ‘হিরো’ হল হাঁদা-ভোদা, কেল্টুদা, বাঁটুল দি গ্রেট, অরণ্যদের, জাদুকর ম্যানড্রেক, পাণ্ডব গোয়েন্দা, দীপক চ্যাটার্জী, রামগোপাল ভার্মা, ডেভিড ধাওয়ান, অমিতাভ-মিঠুন-গোবিন্দা ইত্যাদি ইত্যাদি।

 

সুধী পাঠক, আশাকরি বুঝতেই পারছেন–নেতাজি-গান্ধীজি নয়, ক্ষুদিরাম-প্রফুল্ল চাকি নয়, রবীন্দ্রনাথ-নজরুল নয়, মায় রামকৃষ্ণ-বিবেকানন্দও নয়, যারা তাদের জীবনের আদর্শ হিসেবে বরণ করে নিয়েছিল গোয়েন্দা দীপক চ্যাটার্জী কিংবা শোলের জয়-বীরুকে (অথবা আরেকটু পরের দিকে ‘সত্যা’-র ভীখু মাত্রে-কে) তাদের বড় হয়ে ওঠার মধ্যে কিছু অস্বাভাবিকত্ব, কিছু গোলমেলে ব্যাপার-স্যাপার তো থেকেই যাবে, তাই না? এঁদের মধ্যে অনেকেই হয়তো পরবর্তী জীবনে দেশে-বিদেশে প্রচুর খ্যাতি-প্রতিপত্তির অধিকারী হয়েছেন, কিন্তু তাদের মনের ভিতর সেই এঁদো মফস্বলের সোঁদা গন্ধটা, আচার-আচরণে সেই খ্যাপামোটা থেকেই গেছে।  তাঁদের এখনকার বারোশো স্কোয়ার ফিটের ফ্ল্যাটে অনেক বুক-সেলফ, ওয়ার্ডরোব, আলমিরাহ্‌ এসেছে বটে, কিন্তু মনের ভিতর রয়ে গিয়েছে বই আর ম্যাগাজিন বোঝাই এক-একটা পুরনো ট্রাঙ্ক। এবং ‘এদের প্রত্যেকেরই বৈশিষ্ট্য হল এরা সকলেই মাটি ঘষটে উঠেছে বলে এবং স্কুলের পাশে খাটাল ছিল বলে, সামনে বিরাট ফুটবল মাঠ ছিল বলে, কাছেই শেলী সিনেমার নুন শো ছিল বলে এবং কোনও ঠুলিচশমা পরে পৃথিবীটা দেখতেন না বলে প্রত্যেকে জীবনযুদ্ধে জয়ী হয়েছে।“ (নটে গাছ ও অন্যান্য লেখা, ব্রাত্য বসু)। 

 

কথাগুলো মনে হল ব্রাত্য বসুর লেখা সদ্য প্রযোজনার আলো দেখা একটা নতুন নাটক দেখতে গিয়ে। নাটকটার নাম ‘পুরনো ট্রাঙ্ক’। অনেকদিন হল ব্রাত্যর লেখা কোনও ভাল নাটক মঞ্চের আলো দেখেনি। কেন দেখেনি, তা নিয়ে অনেক অনুমান-সম্মত আলোচনা চালানো যেতেই পারে, কিন্তু তাতে আমার রুচি নেই। কিন্তু ব্রাত্যর মতো একজন নাট্যকারের লেখা-পরিচালনা বা মঞ্চাভিনয় কমে গেল থিয়েটারের জগতে ‘মৌলিক’ নাটকের যে তীব্র অভাব অনুভূত হবার কথা, অবধারিতভাবে সেটা ইদানীং হচ্ছেও। আজকাল তাই ভাল ‘মৌলিক’ নাটক দেখার জন্য একপেট ক্ষিধে নিয়েই থিয়েটারের টিকিট কাউন্টারে দাঁড়াই। বলাই বাহুল্য, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই পেট ভরে না, মনও।

 

‘পুরনো ট্রাঙ্ক’ অনেকদিন পরে সেই খিদে মেটালো অনেকটাই।  মেটালো, কারণ যে দুজনের হাতে এই নাটক তৈরি, তাঁরা দুজনেই সেই বিকেলের রহস্যময় কুয়াশামাখা শহরতলি আর মফস্বলের স্বাদ-গন্ধ নিয়ে বড় হওয়া মানুষ। একজনের কথা তো আগেই বলেছি। (পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সব পরিচালকের সিনেমাগুলো গুলে খেয়েছেন তিনি, তবু আপনি তাঁকে তাঁর প্রিয় পরিচালকের নাম জিজ্ঞেস করলে অবধারিতভাবে উত্তর পাবেন – ‘রামগোপাল ভার্মা’) অন্যজন তাঁরই সুযোগ্য শিষ্য – পরিচালক অভি চক্রবর্তী।

 

এই দুজনে মিলে যে টিনের ট্রাঙ্কটা খুলে ধরলেন আমাদের সামনে, তাতে শুধু নন্টে-ফন্টে অরণ্যদেব আর গোয়েন্দা দীপক চ্যাটার্জীই নেই, আছে আমাদের আলুথালু শৈশব, বিপন্ন কৈশোর, আছে আমাদের কোনোদিন না-পূরণ হওয়া সমস্ত অলীক স্বপ্ন, আছে সমস্ত বঞ্চনা আর হেরে যাওয়াগুলো, , আর আছে অবধারিতভাবে সেই সব স্বপ্ন-সুন্দরীর দল – রূপকথার পাতা থেকে, রূপোলী পর্দা থেকে, টেলিভিশনে প্রতি বুধবারের চিত্রহার থেকে এবং পাড়ার গার্লস স্কুলের দোতলার বারান্দা থেকে প্রত্যেক রাতে যারা নেমে আসত আমাদের ছোট্ট চৌকি পাতা এক চিলতে ঘরে।

 

আজ তাই যৌবনের এই উপান্তে পৌঁছে, জীবনের যে পর্বে অস্তিত্বের সংকট একেবারে চরম আকার ধারণ করে, সেই পর্বে উপনীত হয়ে নিজেকে সবথেকে বেশি খুঁজে পাওয়া গেল ‘পুরনো ট্রাঙ্ক’-এর মুখ্য চরিত্রে অভিনয় করা শীর্ণ চেহারার পিতৃহারা কিশোরটির মধ্যে। (অভিনেতাটির নাম অরিত্র লাল মৈত্র)।  আহা কী যে মায়া জড়িয়ে ছিল তার অভিনয়ে। এমনটা বহুদিন দেখিনি…।) তার বিপন্নতা, একাকীত্ম, চারপাশের দ্রুত বদলে যাওয়া পৃথিবীর সঙ্গে তাল রাখতে না পেরে ক্রমশ গুটিয়ে যাওয়া আর রূঢ় বাস্তবের কামড় এড়াতে আরও আরও অসম্ভব সব স্বপ্নের খোলসের ভিতর ঢুকে যেতে থাকা সেই ছেলেটিই তো আমি, সেই ছেলেটিই তো ব্রাত্য বসু কিংবা অভি চক্রবর্তী। 

 

নাটকটি দেখতে দেখতে থেকে থেকে ঝাপসা হয়ে উঠছিল চোখ, মনে পড়ে যাচ্ছিল অকাল প্রয়াত আরেক মফস্বলের কবি পিনাকী ঠাকুরের লেখা লাইনগুলো –

‘ফিরিয়ে দাও প্রাইজ-পাওয়া রাজকাহিনী,
টিফিনবেলা লড়াই, মাথা ফাটিয়ে আসা,
ভক্তস্যার ক্লাসে ঢুকেই: 'আমরা জানি...'
লভে পড়ার রাইকিশোরী সর্বনাশা!
হঠাৎ পাওয়া ছুটির মত খরচাপাতি ফুরিয়ে ফেলে
জীবন, আমি তোমার কাছে হাত পেতেছি,
ভরদুপুরে পাত পেতেছি, ফিরিয়ে দাও
ফিরিয়ে দাও এক জীবনে অঙ্কে যত শূন্য পেলে।‘ 

আমাদের জীবনের সমস্ত না মেলা অঙ্কও যে জমা হয়ে আছে ওই পুরনো ট্রাঙ্কেই…।


Entertainment NewsBratya BasuBengali Theatre

নানান খবর

নানান খবর

নরক হয়ে উঠছে কাশ্মীর, আর সহ্য করা যায় না: সলমন খান

পহেলগাঁও কাণ্ডের রেশে বিপাকে ফাওয়াদ খান, আটকে যাচ্ছে পাকিস্তানি অভিনেতার ‘আবির গুলাল’-এর মুক্তি?

স্বামীর নিথর দেহের পাশে বসে স্ত্রী, পহেলগাঁও-এর ঘটনায় ঘিবলি ছবি পোস্ট দর্শনার, ট্রোলিংয়ের শিকার হতেই কী বললেন অভিনেত্রী?

‘ম্যায়নে প্যায়ার কিয়া ২’-এ নেই সলমন! বরজাতিয়ার ছবিতে কে হচ্ছেন নতুন ‘প্রেম’?

যেখানে ভালবাসা পেয়েছিলাম, সেখানেই আজ মৃত্যু নাচছে…! জঙ্গি হানায় ক্ষতবিক্ষত কাশ্মীর, কেঁদে উঠলেন বিজয়

ধারাবাহিকের শুটিং ফ্লোরে মনের মানুষ খুঁজে পেলেন সায়ক চক্রবর্তী! কোন নায়িকার প্রেমে পড়লেন অভিনেতা?

সূরজ পাঞ্চোলি নন, প্রভাসকে নিজের ছেলের জায়গাটা দিতে চান জারিনা ওয়াহাব! আচমকা কেন এমন সিদ্ধান্ত অভিনেত্রীর?

খুনের হুমকি পেলেন টাইগার শ্রফ! মুম্বই পুলিশের তদন্তে উঠে এল কোন অপরাধীর নাম? 

ভরপুর অ্যাকশন আর রোম্যান্সের ঝড়! কেমন হল রোহন-প্রিয়াঙ্কা-অনিন্দ্য'র 'ব্রহ্মার্জুন'-এর টিজার?

Exclusive: 'দুটো মানুষ একটা চুমু খাচ্ছে তাতে এত অসুবিধার কী আছে?'-ট্রোলিং নিয়ে মুখ খুললেন সুরঙ্গনা

সৌরভের 'বিগ বস'-এ এবার বলিউড যোগ! কোথায় ঘরবন্দি হবেন তারকারা?

মুখে কথা নেই, গালিগালাজে ওস্তাদ! ‘সিতারে জমিন পর’-এ আমিরের চরিত্র চমকে দেবে দর্শককে

'সিকান্দর' থেকে কাজল আগরওয়ালের দৃশ্য বাদ দেন সলমন! কী ছিল সেই দৃশ্যে? জানলে মাথা ঘুরবে 

আসছে ‘ফর্জি ২’! বিজয় সেতুপতি, কেকে মেননের সঙ্গে কবে থেকে শুরু হবে শাহিদের লড়াই? 

'দিলওয়ালে'-এর ব্যর্থতার পর থেকে কথা বলা‌ বন্ধ করেছিলেন‌ শাহরুখ? মুখ খুললেন রোহিত শেট্টি!

সোশ্যাল মিডিয়া